চটপটি বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। তাঁর মা তাঁকে সহযোগিতা করছেন। সামনে খাবার নিতে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা। মাস্ক নেই কারও মুখে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেলে এসব ক্রেতা ভিড় করেছিলেন রাজশাহী নগরের বড়কুঠি বিনোদনকেন্দ্রে। সেখানে খাবার খেয়ে, ঘোরাঘুরি করে মনকে প্রশান্ত করলেন, মানলেন না কেবল স্বাস্থ্যবিধি।
কথা হলো চটপটি বিক্রেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতা বললেন, ‘মাস্কের কথা কাখে বুইলব আর কে শুইনবে? আমিও বুইঝেছি, করোনা আবার বাইড়ছে, কিন্তু কী কইরব। কেউ মাইনছে না। তাই নিজেরটা খুইল্যা বাক্সের মধ্যে রাইখ্যা দিচি।’
করোনা আবার বাইড়ছে, কিন্তু কী কইরব। কেউ মাইনছে না। তাই নিজেরটা খুইল্যা বাক্সের মধ্যে রাইখ্যা দিচি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চটপটি বিক্রেতা
এদিকে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেও মাস্ক না পরার কারণে রাজশাহীতে গতকাল অভিযানে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকালে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান। মাস্ক না পরার কারণে সকালে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে দুজনকে ২০০ ও ১০০ টাকা এবং বিকেলে নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে একজনকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এই অভিযানের খবর শুনে সন্ধ্যার একটু আগে নগরের বড়কুঠি বিনোদনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঢল সেখান থেকে পদ্মার চরের আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত চলে গেছে। এই বিশাল জনসমুদ্রে যাঁরা মিশে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অল্পসংখ্যকের মুখেই কেবল মাস্ক দেখা গেল। একদল নদীর চরে নামছে, আরেক দল উঠছে। অনেকেই সপরিবার এসেছিলেন ঘুরতে।
বড়কুঠি পার্কের ফুচকা ও চটপটির দোকান ঘিরেই সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় ছিল। পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের পাশের একটি গাছের নিচে আচারের দোকান ঘিরে প্রায় ১০০ জন দাঁড়িয়ে-বসে ছিলেন। মাস্ক ছিল না বেশির ভাগের মুখেই।
এখান থেকে পশ্চিম দিকে লালনশাহ পার্ক পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদীর ধার দিয়ে সিটি করপোরেশন বিনোদনপিপাসু মানুষের জন্য ওয়াকওয়ে ও ঝুলন্ত সাঁকো নির্মাণ করেছে। এর পাশ দিয়ে শতাধিক দোকান বসেছে। পরিবেশটাই এমন ছিল যে কাউকে মাস্কের কথা বলাই যেন অপ্রাসঙ্গিক আলাপ।
আলো নামের এক চটপটিওয়ালা বললেন, মাস্ক পরা দরকার, কিন্তু অনেক ক্রেতাই মুখে মাস্ক দেখলে ঘৃণা করেন। দোকানে বসতে চান না। এ জন্য তিনি মাস্ক পরেননি।
সাদ্দাম নামের এক কিশোর পেশাদার সুরমা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চোখে সুরমা দিয়ে নিচ্ছিলেন। সুরমা দেওয়া শেষে মাস্কের আলাপ তুলতেই লাজুক হেসে সাদ্দাম অন্য কাজে মনোযোগ দিল। আর শফিকুল ইসলাম নামের আতর ও সুরমার ব্যবসায়ী বললেন, ‘মাস্ক পরে থাকলে কামে সমিস্যা হয়।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।